মৃত্যুর ১২ দিন পর চাচার কবরের পাশে সাংবাদিক বৃষ্টি খাতুনকে দাফন

Passenger Voice    |    ০১:০৮ পিএম, ২০২৪-০৩-১২


মৃত্যুর ১২ দিন পর চাচার কবরের পাশে সাংবাদিক বৃষ্টি খাতুনকে দাফন

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৪৬ জনের মধ্যে একজন এই বৃষ্টি খাতুন। মৃত্যুর ১২ দিন পর অভিশ্রুতি ওরফে বৃষ্টির মরদেহ জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক গোরস্থানে বড় চাচা ফারুক শেখের পাশে সোমবার রাত ১০টায় দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে সোমবার (১১ মার্চ) রাত ৮টা ১২ মিনিটে লাশবাহী ফ্রিজার এম্বুলেন্স গাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসার বাড়িতে এসে পৌঁছায়।

লাশ বাহী গাড়ী আসার পর বৃষ্টির মা বোন এবং স্বজনেরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এসময় ওই এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠে। অনেক এলাকাবাসীর চোখের পানি চলে আসে। তবে বৃষ্টির মহদেহ নিয়ে নানান নাটকীয়তার কারণে স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এবং বৃষ্টির স্বজনেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে রাত ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে বৃষ্টির মরদেহের গোসল সম্পন্ন করা হয় এবং রাত ১০ টায় তার নামাজে জানাজা শেষে রাতে খোকসা উপজেলার বনগ্রাম পশ্চিম পাড়া এলাকার পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এরআগে রাজধানীর বেইলি রোডের ভয়াবহ আগুনে নিহত গণমাধ্যমকর্মী অভিশ্রুতি শাস্ত্রী ওরফে বৃষ্টি খাতুনের পরিচয় শনাক্ত হয়। 

ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে তার বাবা সবুজ শেখ এবং মা বিউটি খাতুন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ল্যাবে তার পরিচয় শনাক্ত হয়। অভিশ্রুতি শাস্ত্রী ওরফে বৃষ্টি খাতুনের মরদেহ গতকাল সোমবার (১১ মার্চ) দুপুরের দিকে  ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে বৃষ্টি খাতুনের পিতা সবুজ হোসেন বলেন, কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বনগ্রাম পশ্চিম পাড়া তাদের পারিবারিক কবরস্থানে জানাজার নামাজ শেষে মেয়ে বৃষ্টি খাতুনের দাফন করা হয়। 

বৃষ্টির গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বনগ্রাম গ্রামের প‌শ্চিমপাড়ায়। কলেজের সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রেও অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর নাম বৃষ্টি খাতুন। তবে তার বন্ধু সহকর্মীরা জানতেন তার নাম অভিশ্রুতি। মৃত্যুর পর এই নাম নিয়েই জটিলতা তৈরি হয়। তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছিল।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের নিহত ৪৬ জনের মধ্যে একজন এই বৃষ্টি খাতুন। বৃষ্টি তার বন্ধু, সহকর্মী ও ফেসবুকে অভিশ্রুত শাস্ত্রী নামে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে নিজেকে পরিচয় দেওয়ার কারণে তার মরদেহ হস্তান্তর নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। মৃত্যুর পর মন্দিরের পুরোহিত তাকে সনাতন ধর্মালম্বী দাবি করেন।

অন্যদিকে, সবুজ শেখ ও বিউটি খাতুন বাবা-মা দাবি করে জানান, নিহত তরুণী অভিশ্রুতি নয়, তার নাম বৃষ্টি খাতুন। বৃষ্টি তাদের সন্তান। এমন পরিস্থিতিতে পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ।

এদিকে নিহত বৃষ্টি খাতুনের মা বিউটি বেগম জানান আমার মেয়ে বাড়ি আসতেছে কিন্তু লাশ হয়ে আসতেছে। আপনারা আমার মেয়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন আল্লাহতালা ওকে যেন বেহেস্তবাসী করেন। 

নিহত বৃষ্টি খাতুনের মেঝোবন ঝর্না খাতুন বললেন, আপার নাম বৃষ্টি খাতুন সে বৃষ্টি খাতুনই আছে। আমরা তাকে বৃষ্টি খাতুন বলে চিনি। আপনারা এটাকে অন্যভাবে নিবেন না। আমার বোনের জন্য সবাই দোয়া করবেন।

খোকসা উপজেলার বেতবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম ওরখে জমির মাস্টার জানান, আজ সোমবার রাত ৮টা ১২ মিনিটে দিকে নিহত লাশ  নিজ গ্রামে পৌঁছায়। রাত ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে বৃষ্টির মরদেহের গোসল সম্পন্ন করা হয় এবং রাত ১০ টায় তার নামাজে জানাজা শেষে খোকসা উপজেলার বনগ্রাম পশ্চিম পাড়া এলাকার পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।